হবু চন্দ্র রাজারা এবং তাদের আংশিক লকডাউন

ধরুন বাসে ট্রেনে হেব্বি ভিড়। ভিড় অর্ধেক করতে হবে। তো কত যানবাহন কমাতে বাড়াতে হবে? এটা কেশব নাগের অঙ্ক নয়। একটা ক্লাস ফোরের বাচ্চাও গাঁট গুনে বলতে পারবে, সংখ্যাটা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা চাই।

দু একটা গবেট খুঁজে পেলেও পেতে পারেন, যাদের হিসেব বলবে ট্রেন বন্ধ করতে হবে, বাস কমাতে হবে। দুর্ভাগ্য এই, সেরকম গবেটদেরই আমরা মন্ত্রী সান্ত্রি বানিয়ে রেখেছি!

ঠিক লকডাউন না, এই গবেটরা লকডাউনের কাছাকাছি একটা ফিরিক্কি বার করেছেন! সেটা কেমন? এই যেমন ধরুন, সন্ধ্যা সাত টার পরে রাস্তা খালি করতে হবে। নইলে পুলিশ পেছনে বারী মেরে জানাবে, রাত্রি কালীন কার্ফু চলিতেছে। ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো, আপনি হয়তো ভাবলেন, বড্ড ভিড়- আট টার বাসেই যাব। না, আপনাকে ভিড় বাড়িয়ে ৭ টার আগেই ঘরস্থ হতে হবে!

এর মধ্যেই কিছু বুদ্ধিমান মাথা খাটিয়ে বলতেই পারেন, ধুর মশাই, আপনার মাথায় গোবর। আসলে উদ্দেশ্য হল বাইরে ট্রেন বাস কম দেখে লোকে যাতে ঘরে থাকে। 

হ্যাঁ, তা যা বলেছেন! এই চাঁদি ফাটা গরমে, মারণ ভাইরাস মাথায় রেখে লোকে ফুর্তি করতেই তো বের হন, এবং আপনি ট্রেন বন্ধ করলেই তারা সুড়সুড় করে ঘরে ঢুকে পেটে কিল দিয়ে দিবা নিদ্রা দেবেন! মন্ত্রী সান্ত্রিদের পেট ঘুষের টাকা দিয়ে, কিংবা মানুষের রক্ত খেয়ে ভরলেও ভরতে পারে। আম জনতাকে খেটে রুটি জোগাড় করতে হয়, চাকরি করতে হয়, তার জন্যে বাইরে বের হতে হয়।

আপনি বলবেন, আরে মস্করা নাকি? বাইরে করোনা চলছে। আর মন্ত্রীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন?

না, থাকবেন না বৈকি। তবে হাত খোলার আগে মাথাটা খুললে একটু সুবিধা হত আর কি।

সেটা কীরকম? এই যেমন ধরুন, যানবাহন না কমিয়ে, লোকে যাতে বাইরে বেরোনার কারণ কম খুঁজে পান, সেটার বন্দোবস্ত করা।

মুড়ি মুড়কির সেম দর না। সব জায়গাতেই ৫০% কর্মী – এরকম তুঘলকি ফরমান জারি না করে, সেক্টর চিনহিত করুন, যেখানে কাজ করতে অফিস না এলেও চলে। আইন করুন, আগামী এক মাস তারা যেন সবাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে।

 অনেক সেক্টর আছে, যাদের উৎপাদন কল কারখানায় উপস্থিত লোক সংখ্যার সঙ্গে সমানুপাতিক। সেখানে জোর করে লোক অর্ধেক করে অর্থনীতির ১২ টা না বাজানোই ভালো।

বরং রাত্রি কালীন কার্ফু না জারি করে, যে সেক্টর গুলো রাত্রে চালানো যায়, সেগুলোকে রাত্রেই চালান। দিনে ভিড় কমে তাতে।

আর যেগুলো দিনেই চলবে, সেগুলোকে সব গুলোকে ১০ টা – ৫ টার অফিস না করে কিছু অফিস ৬ টা – ১ টা, কিছু অফিস ১ টা- ৭ টা করুন। দিনে দুবার রাশ আওয়ার টা চার বার হবে, কিন্তু রাশটা হবে অর্ধেক।

মোদ্দা কথা, কমাতে গেলে ভাগ করতে হয়, গুণ নয় – এই অঙ্কটা শিখুন!!

প্রসঙ্গত বলে রাখি, এসব আমার মোটা মাথার মোটা বুদ্ধি না। বিজ্ঞানীরা মাথা খাটিয়ে বার করেছেন এ মডেল – নাম staggered work shift! হু হু বাবা!!

কেউ কেউ বলতেই পারেন – এগুলো লিখতে সোজা, রাতারাতি করা যায় নাকি?

ঠিক বলেছেন, এগুলোর জন্যে প্ল্যান লাগে, সৎসাহস লাগে, সময় লাগে। তার চেয়ে বরং ঢের সোজা, তুড়ি মেরে লকডাউন ঘোষণা করা!

এ অভাগা দেশে গরীবের পেটে ঝাঁপ ফেলতে তত কসরত করতে হয় না!!!

Leave a Reply

Scroll to Top