স্বগতোক্তি

ডাক্তার বনাম রোগী- গোলটা আসলে কোথায়?

এই সিরিয়াস সময়ে দুটো সিরিয়াস কথা না লিখলেই নয়। এখন সহানুভূতি আর সংবেদনশীলতা দেখানোর হিড়িকে আপনি গাইতেই পারেন, ডাক্তার রা ভগবান। কিন্তু ঘটনা হল তাঁরা নন, তাঁরা আমি আপনার মতই মানুষ। আপনার জীবনে মৃত্যু বলতে হয়তো আপনার ঠাকুরদার হার্ট attack কিংবা ছোটো পিসির বড় ছেলের বাইক accident। হাতে গোনা। কিন্তু এরা প্রতি দিন অনেক মৃত্যু দেখছে। ঘুমানোর সময়ে জানে পরের দিন আরও চারটে রোগী আর ইহলোকে থাকবেন না। এইসবের মাঝে সংবেদনশীল হয়ে থাকা সম্ভব নয়। সৌজন্য থাকতে পারে অবশ্য…

যাক গে, প্রশ্ন টা ডাক্তাররা ভগবান এর থেকে কতটা বেঁটে তা নিয়ে নয়। আরোও যথাযথ প্রশ্ন হল তাঁরা কি প্রফেশনাল? আমরা জানি, বিরাট কোহলি প্রফেশনাল। তিনি বল পিটিয়ে যা টাকা পান, তা আমি আপনি চৌদ্দ পুরুষেও পাব না। কিন্তু তিনি রান করেন, এবং ফিটনেস বজায় রাখতে আমাদের মত ফুচকা খান না। বেশি না গেঁজিয়ে সোজা কথায় আসা যাক। হাঁ, ডাক্তার রাও প্রফেশনাল, কিন্তু private চেম্বার এ রোগী দেখার সময়ে। তাঁরা জানেন ওখানে এক ঘন্টায় যা পান, সরকারি হাসপাতালে সেটা পাঁচ ঘন্টাতেও দেয় না। বলাই বাহুল্য, অঙ্ক তাঁরা ভালোই জানেন, ছাত্র কালে এক একজন জুয়েল ছিলেন। অতএব চার ঘন্টা ac রুম এ বসে এক ঘন্টা রোগীদের পদধুলি। সহজ হিসাব। এইখানে একটা diplomatic কথা গুঁজে রাখা যাক। সবাই নন, ‘কিছু’ ডাক্তার। সেই কিছুর পরিমাণ টা যদি এক সপ্তাহ আগে কোনও হাসপাতালে গিয়ে থাকেন, বা দু সপ্তাহ পরে কোথাও যান, নিশ্চয় বুঝে যাবেন।

এবার আসি জুনিয়র ডাক্তার দের কথায়। তাঁরা হল সাঁড়াশির সুপাড়ির মত। একদিকে সিনিয়র ডাক্তার দের উদাসীনতা, আর অন্যদিকে বেহাল হাসপাতালে রোগীদের চাপ, গালিগালাজ। তাতে কারোর কিছু এসে যায় না, এই ভাবেই সবাই এত দিন ডাক্তার হয়েছেন, তাঁদের কেও হতে হবে। এই ভাবেই joint এ পাস করা উজ্জ্বল মুখ গুলো আগুনে পোড়া ইস্পাত এর মত একদিন পয়সা রোজগারের মেশিন হয়ে যাবেন। মাঝ খানে একজন দুজন…

রোগী দের কথাটা আর বললাম না। পশ্চিমবঙ্গ এ বাস করেন, তাই ac ঘরের বাইরে পা ফেলতে হয় না, এই সম্ভাবনা খুবই কম। অতএব তাদের কথা ভালোই জানেন, কিংবা না জানলেও অনুমান করেন।

তাহলে আসল কথা, সমস্যা টা কোথায়?
এই রোজকার ব্রেকিং নিউজ এর পাঁচিল ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসুন, দেখবেন সমস্যাটা আসলে শুধু ডাক্তার রোগীদের সম্পর্কে নয়। এই বিশৃঙ্খলা, এই অসহিষ্ণুতা সমাজের সর্বত্র।

চাকরী নেই, সরকারের তাতেও কিছু যায় আসে না, কি করবেন? অনশন। পকেটমারি হল, দেখলেন 23 বছরের ছেলেটা purse নিয়ে পালাচ্ছে। মনে হলো ধরে দিই একটা গনধোলাই। জানেন এসব ক্ষেত্রে পুলিশ কেস করেও কিস্যু হবে না। একটা ছোট্ট কাজের জন্যে দিনের পর দিন বিডিও অফিসে গিয়েও কাজের কাজ হচ্ছে না। তখন মনে হবেই, কেরানী শ্যাম বাবুকে দিই দু চাপর। জানেন নোট না ধরালে কিছুতেই বলবে না সাহেব ঠিক কখন আসেন। তেমনি চোখের সামনে ছেলেটা কাতরাচ্ছে, এ দরজা থেকে ও দরজা, অথচ কারোর কিছু যায় আসে না। মনে হবেই, সবকটাকে কেলিয়ে আসি।

এবার শেষ অব্দি আপনি সত্যিই ম্যাটাডর ভরে লোক আনবেন কিনা, সেটা নির্ভর করছে আপনার কতটা screw ঢিলে, এবং background এ কত বড় নেতার সঙ্গে কানেকশন আছে।

কিন্তু মোদ্দা কথা হল, এই অহেতুক রাগ, ক্ষোভের চিত্র সর্বত্র। এবং তার কারণ প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা এবং সরকারের চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয়তা। অন্যদিকে আরেক দল প্রফেশনাল আছে। এনারা ভোটের সময়ে নেতাদের সার্ভিস দেবেন। বিনিময়ে সারা বছর দাদা গিরি, গুন্ডাপনা। মাঝে মাঝে action নিতে গিয়ে পানীয় বেশি পড়লে তিল কে তাল করে তুলবেন। আর খবর পাবে আনন্দবাজার। মাঝখান থেকে আমার আপনার ঘরেরই কেউ একজন গুম হয়ে যাব, আর বাকি পাবলিক হবে হয়রান।

তাহলে সমাধান কি? নাহ্ ভায়া, আপাততঃ অদূর ভবিষ্যতে সমাধান নেই। এই অরাজকতা চলবে বৈকি। যতদিন না আমি আপনি দেশের জনগন শিক্ষিত হবে। যেদিন বুঝব মোদীর মোটা মোটা কথা নাকি মনমোহন এর মিনমিনে অর্থনীতি, actually কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়। (এই খানে বোধ হয় ব্যক্তিগত বিশ্বাস অসংলগ্ন ভাবে এসে পড়লো। যাক গে) আপাততঃ তত দিন যে কাজ করছেন, সে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ হোক, আর জেলা অফিসের ছোটো সাহেব, কিংবা টিউশন মাস্টার, মন দিয়ে করুন। পয়সা নিন, কিন্তু প্রফেশনাল হোন, নিজের ডিউটি টুকু নিজে করুন। সরকারি চাকরি পেয়েছেন বলে অফিসে বসে বসে এত বড় বড় ভাট পড়ার দরকার নেই। সামাজিক দায় এবং দায়িত্ব টা বুঝে নিন। নইলেই সব বুমেরাং হবে। যেমন টা হচ্ছে…

Leave a Reply

A Soliloquy
A bilingual blog in Bengali and English. © A Soliloquy