মানে বই

ছেলেবেলায় একটা মানে বই থেকে খুব মুখস্থ করতাম উত্তর। আমি একা না, আমাদের ব্যাচের প্রায় সক্কলে। কেউ তখন বুঝিয়ে বলে নি, যে ওই মানে বই এর বাঁধা উত্তরের বদলেও নিজের মতো করে আলাদা অথচ সঠিক উত্তর লেখা যায়।

সমাজ আমাদের জীবনের জন্যেও একটা এরকম তাগড়াই মানে বই লিখে রেখেছে। দারুণ পড়াশোনা করো। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ফাটিয়ে নাম্বার পাও। এরপর চাকরির পরীক্ষা। চাকরি। বিয়ে… তারপর পরবর্তী প্রজন্মকে আবার তৈরি করো, ওই একই মানে বই এর ধাঁচে।

উত্তরটা যে বেশ গুছিয়ে লেখা, সেটা অস্বীকার করতে পারি না। তবে সমাজের তৈরি করে রাখা এই মানে বইয়ে কিছু কথা পরিষ্কার করে লেখা থাকে না। অনেক গুলো নাম্বার পেয়ে গেলেই চিচিং ফাঁক — জীবনটা এতটাও সরলরেখা না।

অতএব যারা মানে বই এর উত্তর মুখস্থ করে উঠতে পারে নি, তাদের জন্য একটাই বলার — নিজের মত করেও একটা উত্তর লিখতে চেষ্টা করতে পারো। জীবন মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিটে থেমে যায় না।

পুনশ্চঃ

আরেকটা কথা আরও পরে বুঝেছিলাম। আমাদের ক্লাসে যে ফার্স্ট হত, সে আসলে নিজের মতো করে লিখত বলেই নাকি প্রথম হত। মানে বই থেকে মুখস্থ লেখা উত্তর তার ছিল না।

চারদিকে তাকিয়ে দেখি। সে মোদী বল, বা শচীন, শ্রেয়া বল বা বচ্চন – যাদেরকে সব চেয়ে সফল বলে আমরা জানি, তাদের অনেকেরই মার্কশিটের হদিস কেউ রাখে না। তাদের উত্তরটা নিশ্চয় ওই মানে বইয়ের ধাঁচে না। নইলে তাদের দৌড় ১০ এ ৬ বা ৭ এ গিয়ে থেমে যেত। হয়ত একটা ব্যাঙ্কে চাকরী? কিংবা হয়ত … সে অনেক কিছুই হতে পারত, যেগুলোর খবর আমরা পেতাম না।

যাক গে, এদের কথা থাক। ক্লাসে সবাই ফার্স্ট হয় না, জীবনেও সবাই অত ‘সফল’ হয় না। তাছাড়া এত সাফল্যে কাজ নেই। সফল হওয়াটাই জীবনের মূল উদ্দেশ্য – এটাও মানে বই এর শেখানো একটা গোলমেলে উত্তর। সাফল্যের পরীক্ষায় ১০ না পেয়েও মানুষ সুখী হতে পারে। একটা বেসিক প্রয়োজন মিটে গেলে ভালো থাকতে পারাটা একটা আর্ট।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে যে যাই নাম্বার পেয়ে থাকো, সব্বার জন্যে শুভেচ্ছা – সবাই সুখে থেকো। 😃😃👍

Leave a Reply

Scroll to Top