ছোট বড় বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিডিয়া একটা অদ্ভুত মেলড্রামা তৈরি করে। তারা জনমানসে সুচারুভাবে গেঁথে দেয় এই পরিস্থিতিতে সরকারের কি করা উচিৎ ছিল। আর আমরা সাধারণ মানুষ, যেহেতু আমাদের খুব একটা তলিয়ে ভাবার দায় নেই, মিডিয়ার বাতলে দেওয়া সেই রাবিশ গুলো দিয়েই যাচাই করতে বসি সরকারের কর্মকাণ্ডকে।
এই যেমন ধরুন, আমরা অনেক দিন ধরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার অনেক ছবি পাচ্ছি। সাম্প্রতিক রেল দুর্ঘটনার খবরটায় একটুও কষ্ট হয়নি তা বোধ হয় মহা পাষণ্ডও বলতে পারবে না।
কিন্তু কথাটা হল, তার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত শ্রমিকদের এখনই ঘরে ফেরাতেই হবে – এই সিধান্তটা “সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত” সেটা ধরে নেওয়া কি ঠিক? ১৫ জনের ভাগ্য দিয়ে আমরা কি অবলীলায় দেশের প্রায় ১৫০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের ভবিষ্যতও বিধাতার ওপর ছেড়ে দিলাম! তাদের পরিবারের হিসেবটা ধরলে সংখ্যাটা ৬ কোটিতে দাঁড়াবে হয়তো।
এখন খবর পাচ্ছি, রেল দিনে প্রায় ৩০০ টা ট্রেন চালাতে পারে। ৫০ টা চললেও ৫০ x ২৪ কোচ x ৫৪ সীট – প্রায় ৬৫ হাজার লোক প্রতিদিন ঘরে ফিরতে পারবেন। গোটা ভারতেই যেখানে দিনে টোটাল টেস্ট হচ্ছে ত্রিশ হাজার মত, সেখানে এই মানুষ গুলো যে সুস্থ ভাবেই ফেরত আসছেন সেটা যাচাই করা তো মুশকিল!
এটা ঠিকই যখন মানুষ গুলো দেখতে পাচ্ছে তাদের মালিক আর বেতন দিচ্ছে না, কাজ বন্ধ, কবে খুলবে কেউ জানে না, হয়তো কাজটা চিরতরেই চলে গেলো, এদিকে সম্বল শেষের পথে – তখন তারা ঘরে ফিরতে চাইবেই। ঘরের মানুষগুলোও আকুতি নিয়ে বসে থাকবে, ঘরের ছেলে অন্তত ঘরে ফিরুক।
কিন্তু সরকার কি সত্যিই পারত না তাদেরকে তাদের এখনকার জায়গাতেই ত্রান পৌঁছে দিতে? রেলের টিকিট না হয় ফ্রিতে দেওয়া হল। কিন্তু একটা কপর্দক শূন্য মানুষকে তার কপর্দকহীন পরিবারে ফিরিয়ে দিয়ে কতটা লাভ হল? নাকি আরও হাজার হাজার গ্রামকে নতুন করে করোনার মুখে ঠেলে দেওয়া হল? নাকি এটা সরকারের সস্তায় বাজিমাত – পাবলিকও খুশি, দায় ও সারা হল দায়সারা ভাবে?
প্রান্তিক মানুষগুলোর দুর্দশা বোঝা বলুন, কিংবা সরকারের সঠিক পন্থা নির্বাচন – কোনটাই একটা ফেসবুক লেখকের পক্ষে সম্ভব না। আমারও জ্ঞানের উৎস তো এই মিডিয়াই! প্রশ্নটা খানিকটা এটা, যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত গুলো সঠিক নাকি আরও ভালো দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল? কিন্তু মূল সংশয়টা হল ভারতের বর্তমান পলিটিক্সে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে। সরকারের পলিসি নির্ধারণে মিডিয়ার এতটা প্রভাবিত করার ক্ষমতা খুব পুরানো নয় এদেশে। টিভি চ্যানেল গুলোর টিআরপির লড়াই, সমস্ত ঘটনাকে নিয়ে মানুষের স্বাভাবিক সংবেদনশীলতাকে অপব্যবহার করে জনমানসে সবকিছুর একটা চটজলদি সিদ্ধান্ত তৈরি করে দেওয়া, এগুলো বেশ সাম্প্রতিক – কিন্তু বড় ভয়ঙ্কর।
এমনিতেই গনতন্ত্রে একটা মুলগত সমস্যা হল ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি – জনপ্রিয়তা। দরকারেও রোগীকে তেতো ওষুধ গেলানোর বন্দোবস্ত নেই যথার্থ গণতন্ত্রেও। প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনেও মনে হয়, তিনি সম্ভবত প্রত্যাশা করেছিলেন লকডাউনে লোক নিজেদের জায়গাতেই থাকবেন। তাহলে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত আসলে কার? এখানেই শিউরে উঠি যখন দেখি, পরোক্ষে সমস্ত ডিসিশন আসলে নিয়ে নিচ্ছে মিডিয়াই। সরকারের ভূমিকা শুধুমাত্র সেটাকে কাজে রূপান্তরিত করায়।
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.