ওরা জানে না ইতালি দেশটা কোথায়। পৃথিবী যে গোল, সেটাই বোধ হয় সবাই বলে বলেই ঠিক ধরে নিয়েছে। ওদের সামর্থ্য নেই worldometer এর পাতাটা খুলে চিত্রগুপ্তের মত হিসেব নিকেশ কষে নেবে, আজ নতুন করে কোথায় কয়জন মারা গেলো। ওদের অবকাশ নেই একলা ঘরে বসে রাত তিনটেতে ফেসবুক এর ওয়ালে নাকি কান্না কাঁদার। ওরা জানে না করোনা কি। ওদের কাছে জ্বর গায়ে থম মেরে বসে থাকাটা বিলাসিতা – মারা যাবে সেদিনের রুজি।
ওরা কাল বেরিয়ে যাবে রিকশা নিয়ে। হয়তো মিত্র পাড়ার বাবু জানালা থেকে ভিডিও করে রাষ্ট্র করবেন, দেখুন, এরা মরলেই বা দেশের কি ক্ষতি! অশিক্ষিত ছোট লোক! কিংবা যে পা বসে গেলে ওরা ভয় পায় খেতে পাবে কিনা, সেই পায়েই পড়বে পুলিশের বারি।
এদ্দুর পড়ে আপনার মনে হতেই পারে, এক এঁড়ে আঁতেল লক ডাউনের বিরুদ্ধে যুক্তির পসরা সাজিয়ে বসেছে — যেমনটি করে থাকে আর পাঁচটা ব্রেকিং নিউজের পরে। আসলে একটা দিক তাকাতে গেলে ভয় হয় অন্য দিকটা অবজ্ঞা করে বসি। লিখি না কিছু তাই।
ওরা যারা মার খেল, তাদের কথা লিখতে গেলে চেপে যেতে হয় ওই লোকটার কথা — যে আগামী ২১ দিনে ছুটি পাবে না বাড়ি যাবার, লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে রাস্তার মোড়ে। আর দেখতে হবে একের পর এক লোক বেবাক হুশ হাশ বেরিয়ে যাচ্ছে গাড়ি নিয়ে, বাইক নিয়ে, সাইকেল নিয়ে। ধরলে অজস্র মিথ্যা কথার ফুলঝুড়ি। আসল কারণ নকল কারণ বোঝা দায়।
সহজ উপায় – মারো। যত মারবে তত ভয় পাবে। ভয় না পেলে কি করে বন্ধ হবে পিঁপড়ে দলের আগুনে ঝাঁপ? আর মারতে যদি হয়, সফট টার্গেট চিনে নেওয়াটাই বিবেচকের মত কাজ।
আজ সবে দ্বিতীয় দিন। জানি না কি যে হবে শেষমেশ। কখনও শিরদাঁড়া ঠাণ্ডা হয়, কখনও কান্না পায়। চাতক পাখির মত বসে থাকা — কখন আসবে এই লক ডাউন নামক টুকলিপনার পরে ওদেরও জন্যে দু একটা ঘোষণা।