প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একটা কাল্পনিক ফোনালাপ
– বহুত বহুত সুক্রিয়া দাদা।
কেন জানি না প্রায় সব অবাঙালিরাই বাঙালিদের দাদা বলে সম্বোধন করে। কিন্তু উনি বরাবর মিত্র বলেই ডাকেন আমায়। আজ হয়তো একটু বিপর্যস্ত। যা চলছে চারদিকে!
আজ ফোনে অনেক্ষন কথা হল ওনার সঙ্গে। বোধ হয় আমার বিগত কয়েকটা পোস্ট দেখে মনে হয়েছে আমি খুব রেগে আছি। তাই নিজে থেকেই ফোন করেছেন। সব কথা তো খুলে বলা যায় না। মনেও নেই। কিছুটা জানিয়ে গেলাম।
তখন আমি আরেকটা স্ট্যাটাস দেবো দেবো ভাবছি, ফোনটা এলো। রিসিভ করতেই চেনা গলা।
যাই হোক, গলা শুনেই বুঝলাম উনি।
খানিকটা ক্ষোভের সুরেই বললাম, এতদিন পরে কি মনে করে? আপনি এখন যতই ধানাই পানাই করেন, আপনার এই ভুলভাল ঘণ্টা বাজানো বাতি জ্বালানো কিন্তু আমি মোটেই মেনে নিতে পারছি না। আপনার ভক্তরা তো রাস্তায় বেড়িয়ে মিছিল পর্যন্ত বার করে ফেলছে, আসছে বছর আবার হবে, এইসব কি?
উনি দেখলাম একটুও দমে না গিয়ে সেই স্বভাবসিদ্ধ কনফিডেন্স নিয়ে আমার মাথা খেতে শুরু করলেন।
দেখিয়ে প্রতাপ বাবু, এই যে যারা আমার একটা কথায় রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ল, ভেবে দেখেছেন তারা কারা? ধরুন কি যেন নাম, হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাদের রাহুল বাবু আমার সিটে। বিশাল একটা প্রেস কনফারেন্স ডেকে কয়ে দিলেন, কাল থেকে লক ডাউন। এরা শুনত তাঁর কথা? এত বড় দেশ। এত কোটি মানুষ। আমি না বললে কয়জন জানত করোনা কি জিনিস? ওদেরকে যে অনেকটা সময় বাড়িতে বসিয়ে রাখতে পেরেছি সেটা তো একবারও ভেবে দেখছেন না। আপনি দেখছেন আমি ওদের উস্কে দিয়েছি বলে ওরা পিলপিল করে বেড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আমি বলেছিলাম বলেই যে ওরা ঠায় এতদিন ঘরে বসে রইল, সেটার কৃতিত্ব তো দিচ্ছেন না।
আমি বলতে যাচ্ছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ ,জানা আছে ঘরে কিরকম বসে আছে। কিন্তু কি জানি কি রকম মনে হল, কথাটা খানিক সত্য। এই যে আধা লক ডাউন বলেও কিছু একটা হচ্ছে, তা হয়তো ওনার কথার জোরেই। তাও না বলে থাকতে পারলাম না, সে না হয় বুঝলুম। তা বলে এই ৫ মিনিট ৯ মিনিটের নাটক গুলোর কি খুব দরকার ছিল?
উনি একটু হেসে নিলেন এক চোট। তারপর বললেন, আপনি তো symbolism বোঝেন। এই যে গীতাতেই বলেছে ভগবান সর্বত্র বিরাজমান, তাও তো মূর্তি পূজা হয়? নইলে সাধারণ লোকে ভগবান খায় না মাথায় দেয় বুঝতেই পারত না। আমার এই ভক্ত কুলের মন আপনার মত ওই sophisticated বই পড়া লোক কি করে বুঝবে বলুন। এদেরকে বশে রাখতে গেলে এই রকম একটা symbolism লাগে বৈকি। একটা কিছু কল করে এই unity unity খেলাটা চালিয়ে না গেলে ওরা একদিন ভুলেই যাবে লক ডাউন চলছে।
সত্যি বলতে কি যুক্তিটা আমার ঠিক মাথায় ঢুকল না। আমি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম, দেখুন আপনার সঙ্গে আমার অনেক দিনের আলাপ। আপনার মাথায় আবার অন্য কিছু নেই তো? মানে এই রকম একটা crisis সিচুয়েশনে নিজের জনপ্রিয়তাটা আরও খানিকটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। crisis টা আরও একটু সাংঘাতিক হয়ে গেলে আপনিও আরও একটু জাঁকিয়ে বসবেন হয়ত। ইতিহাসে তো এরকম অনেক হয়েছে, তাই বলছিলাম আর কি। আবার রেগে যাবেন না যেন।
উনি আবার এক চোট হেসে নিয়ে বললেন, ভরোসা কিজিয়ে মুঝ পর। দেখুন না কি হয়।
তারপর উনি একটানা এক গাদা কি সব নিজেই বলে গেলেন। আমাকে প্রায় কথা বলতেই দিলেন না। কি জানি, মনে হয় বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছি হয়তো। বেশ খানিকক্ষণ পরে হাম এক সাথ লরেঙ্গে বলতে বলতে ফোনটা রেখেই দিলেন।
তখনই আমার মনে পড়লো, এ বাবা আমিও বোকার মত ঘণ্টা আর বাজি নিয়েই ঘ্যান ঘ্যান করে গেলাম। ডাক্তার নার্সদের সিকিউরিটি বা শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেলাম।
দেখি আবার কবে ফোন করেন। আমি করলে তো ধরেন না। নিজের যেদিন কথা বলার ইচ্ছে হয় বলেন।
#সব চরিত্র কাল্পনিক।
# জগত ধূসর, সাদা কালো না। অতএব, আমি কারোর ভক্তও নই, আবার সবেতেই গাল মন্দ করার দলেও না।