– আমাদের মত দেশে কি আর জনে জনে টেস্ট করা যায়? আমাদের মত দেশে হাসপাতাল উপচে পড়লে সরকারই বা কি করবে!
– এই সিলেক্টিভ ঘ্যানঘ্যানে সহানুভূতি দেখানো গুলো ছাড় তো। তোরা পাবলিক শালা মিডিয়া যেমন নাচাবে তেমনি নাচবি, পলিটিক্যাল লিডাররা যেমন কাঁদাবে তেমনি কাঁদবি! কই ইন্ডিয়া
যখন সেনা সংখ্যায় পৃথিবীতে এক নম্বর, বলিস তো না, আহা এরকম একটা দেশে এত সেনা না পুষলেই নয়? কোটি কোটি টাকা দিয়ে যখন যুদ্ধ বিমান কেনে, কই একবারও এসে বলিস তো না, আহা আমাদের মত দেশের আবার এত যুদ্ধ জিগির কিসের। একটা বিমান কম কিনে দশটা হাসপাতাল এক্সট্রা বানালে হত না?
সুমনের আঁতেল মুড অন হয়ে গেছে দেখে আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হুমম জানি জানি, সিকিউরিটি দেখিয়ে ন্যাকা কাঁদুনি দিবি ভাবছিস তো? গুগল করে জেনে নে, অনেক দেশ এর কোনও সেনাই নেই। তাও কেউ গিয়ে বলা নেই কওয়া নেই, বেদখল করছে না। দেখ ভাই আজকের দিনে যুদ্ধের কথা ভেবে হাতি পোষার থেকেও আগে দরকার ঠিকঠাক কুটনীতি। যাতে যুদ্ধ টাই না হয়। সে ব্যাপারে তোদের গুণধর নেতারা তো ডাহা ফেল। ভাই, ডিপ্লোমাসি টা ঠিকঠাক করতে না জানলে আসল সময়ে ওই লক্ষ লক্ষ সেনা দিয়েও কিস্যু হবে না।
আমি আর নিতে না পেরে বলেই দিলাম, ওসব মুখে অনেক বলা যায়। আমাদের ঘাড়ের কাছে পাকিস্তান বলে একটা দেশও আছে। আমাদের মাথা কেটে নিতে সবসময়ই মুখিয়ে। সেইসবও ভাবনার বিষয়। এবার সুমন যেন জ্বলে উঠলো। কটমট করে তাকিয়ে বললো,
– উফফ! আবার সেই কাশ্মীর! দেশের নেতারা তোদের কে সেই যে একটা চুষি কাঠি ধরিয়ে দিয়েছে, সেই চুষেই চলেছিস কবে থেকে। মুরোদ থাকে তো, কর না একটা plebiscite, বল না বুক উঁচিয়ে, ভাই কাশ্মীর, তোমার যদি জাহান্নামে যাবার খুব বাসনা থাকে যাও গে, নইলে ভেবে চিন্তে দেখ, আমাদের দ্বার খোলা। যুদ্ধ টুদ্ধ নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাদের মেলা কাজ পড়ে। আমরা এখন বাকি দেশে রাস্তা ঘাট হাসপাতাল বানাবো। ইচ্ছে হলে এসো, একসাথে হাঁটি। নইলে ফোট। পারবি বলতে? পারবি না তো? ওহে পাব্লিক, আগে ঠিক কর, তোদের হাসপাতাল চাই না কাশ্মীর?
বলেই ধাঁ করে চলে গেলো সুমন। আমার আর বাকি লজিক বলার সময়ই দিলো না। শালা এক নম্বরের দেশদ্রোহী। তবে তারপর থেকে মাথাটা কেবলই ভনভন করছে, ভাবছি কি চাইব – কাশ্মীর না হাসপাতাল – যদি দুটোই একসঙ্গে না মেলে – আমাদের মত দেশে?
পুনশ্চ- ১) সুমন একটু আগে মেসেজ দিয়েছে মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হতে – – ভাই, তখন চড়ে গেছিলো। কিছু মনে করিস না। এখন ক্রাইসিস। এগুলো হয়ত অবান্তর প্রসঙ্গ। তবে প্রশ্ন গুলো এখনই না তুললে তোরা তো আবার সব ভুলে যাবি। বাই দ্য ওয়ে, এখনও সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি ঢোকার চেষ্টা চলছে। এই সেদিন ৫ জন সেনা মারা গেলো। শুধু তোদের নেতাদের সেটা নিয়ে ধাঁই কিরি কিরি বোলতালটাই যা নেই। এখন পাবলিক কেবল করোনাটাই খাবে কিনা!
পুনশ্চ- ২) আমি ইতিমধ্যে গুগল করে জানলাম,
ক) এক নম্বর নয়, ভারত আসলে সেনা সংখ্যায় দুই-এ। চীনের পরে। তবে আমেরিকারও আগে!
খ) পৃথিবীতে ২৩ টা দেশের নাকি কোনও সেনাবাহিনী নেই। আহা, কি ভালো ভালো তাদের প্রতিবেশী গো।
গ) একটা লিস্ট পেলাম যেখানে ১৫০ টা দেশের মধ্যে এমন ৮০ টা দেশ আছে, যাদের সেনা সংখ্যা যোগ করলে যা দাঁড়ায় তার থেকেও বেশি আছে ভারতের একারই! তবে ভারতের আয়তনটাও তো কম না!
ঘ) ভারত এদিকে চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতে পারে – তাও প্রচুর সস্তায়। অথচ যুদ্ধবিমান এর বেলায় কেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে ফ্রান্স কিংবা ট্রাম্পের দেশে ছুটতে হয় – গুগল করেও পেলাম না। ওরা এদেশে ভিজিটে এসে কি যে ফুস মন্ত্র দেয়!
#জগত_ধূসর। কোনও লজিকই চরম সত্য নয়। তবে তর্কটা চলুক।